আমার সেই সময়ের ঈদগুলো
ইদানীং কেমন জানি অতীতের মধুর স্মৃতির কথা মনে করতে পারছিনা! এটা কেন হচ্ছে সেটাও বুঝছি না। হয়তোবা নানাবিধ কাজের চাপে থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে। যা হোক এবারের ঈদকে সামনে রেখে আমার সেই সময়ের ঈদগুলোর কথা স্মরণ করতে চাইছি। খুব সুন্দর ছিলো দিনগুলো। ঈদ মানেই আনন্দ আর হাসি খুশি। ঈদের আগের দিন আপুরা মিলে ঘর-দোর পরিস্কার করে বাড়িটাকে সাজিয়ে তুলতেন আর আমি তাদেরকে টুকটাক সাহায্য করতাম। যেমন- বই পত্র গুছিয়ে রাখা, দোকান থেকে গোলাপ-রজনীগন্ধা কিনে আনা ইত্যাদি।
ঈদের দিন সকাল সকাল মা ঘুম থেকে ডেকে দিতেন। ঘুম থেকে উঠে গোসল সেড়ে নিতাম। তারপর সকালের নাস্তা করে ঈদের নতুন জামা পড়ে মা কে সালাম করে জেঠাতো ভাইদের সাথে ঈদগাহে যেতাম। নামাজ শেষে আমার সম বয়সীদের সাথে কুলোকুলি করতাম আর মুরব্বীদের সালাম করতাম। বড়রা হাঁটু গেড়ে বসে আমার সাথে কুলোকুলি করতো। এটা দেখে মজাও পেতাম। তারপর কবরস্থানে গিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া দাদা-দাদী আর পাড়া-প্রতিবেশীদের কবর জিয়ারত করে বাসায় ফিরতাম।
ঈদগাহ থেকে বাসায় ফিরে প্রথমে বাসায় তৈরি করা ঈদ রেসিপিগুলো একটু একটু খেতাম (ছোটরা কী আর বেশি খেতে পারে?)। তারপর মা’র কাছ থেকে ঈদ সেলামী নিয়ে জেঠাতো ভাইদের সাথে পুরো পাড়ার সব ঘরে যেতাম। পুরো পাড়া বেড়ানোর পর আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য তাদের সাথে বের হতাম। ঈদের ১ম দিনে সব আত্মীয়দের বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হতোনা। তাই এভাবে ঈদের ২য় দিন পর্যন্ত বেড়াতাম। বেড়ানোর পর বাসায় ফিরে এসে ঈদ সেলামী কত পেয়েছি সেটা গুনে দেখতাম।
এভাবে ঈদের ১ম ও ২য় দিন কেটে যেত। এরপর ঈদের ৩য় দিনে আপুরা সাধারণত তাদের বান্ধবীর বাড়িতে বেড়াতে যেত। আমাকেও তাদের সাথে নিয়ে যেত। অনেক সময় দেখা যেত একই জায়গায় জেঠাতো ভাইদের সাথে গিয়েছি পরে আবার আপুদের সাথেও গিয়েছি। ঈদের ৫ম কিংবা ৬ষ্ঠ দিনে পরিবারের সব সদস্যরা মিলে কোনো পর্যটন স্পট থেকে ঘুরে আসতাম। এক্ষেত্রে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত কিংবা ফয়েস লেকে বেশি যাওয়া হতো। বর্তমানের ফয়েস লেক আগে এমনটি ছিলো না। এখন এটা অনেক আধুনিক, ২০০৭ সালের পরে ফয়েস লেকের বিবর্তন ঘটেছে।
ছোটবেলার ঈদগুলোতে বাবাকে মিস করতাম। কারণ সে সময়ে বাবা বেশির ভাগ সময় প্রবাসে থাকতেন। সে সময়ে ঈদের আগে অর্থাৎ রমজান মাসে বাবা যখন বাসার টেলিফোনে ফোন করতেন তখন বাবাকে অনুরোধ করতাম ঈদে বাড়িতে আসার জন্য। বাবা হেসে হেসে উত্তর দিয়ে বলতেন- “পরের বছর তোমাদের সাথে ঈদ করবো ইনশাল্লাহ”। ঈদের দিন বাড়িতে আরেকটি মজার ব্যাপার লক্ষ্য করতাম। আমাদের পুরো পাড়াটিতে শুধু আমাদের বাড়িতে টেলিফোন সংযোগ থাকাতে পাড়ার যারা বিদেশে থাকতেন তারা আমাদের টেলিফোনটিতে ফোন করতেন তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার জন্য। আমার খুব ভালো লাগতো এটা দেখে যে- অন্তত এই টেলিফোনটি থাকার কারণে পাড়ার প্রবাসীরা উনাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারছে, বিপদ-আপদে কথা বলতে পারছে।
একদিন এক কান্ড করে বসেছিলাম। ঈদের দিন ঈদগাহ থেকে বাসায় ফিরে খেয়াল করলাম আমার ঈদের জামাটা আমার কেমন জানি সুন্দর লাগছে না! সে কী কান্না শুরু করেছিলাম! মা কোনো রকম আমাকে শান্ত করেছিলো। পরক্ষণে জেঠাতো ভাইদের সাথে যখন বেড়াতে বের হলাম তখন মনটা কেমন জানি আবার ভালো হয়ে গিয়েছিল। আরেকবার কেমন করে যেন আমার ঈদ সেলামীগুলো পকেট থেকে কোথায় পড়ে যায়। বাসায় এসে যখন দেখি আমার ঈদ সেলামীগুলো নেই তখন মন খারাপ করে বসেছিলাম। মা যখন দেখলো আমি মন খারাপ করে বসে আছি তখন কারণ জানার পর মা আবারো আমাকে ঈদ সেলামী দিলো। তাতেই মনটা ভালো হয়ে গিয়েছিল আমার।
Posted on অগাষ্ট 16, 2012, in স্মৃতিচারণ and tagged আমার শৈশব, ঈদ. Bookmark the permalink. 29 টি মন্তব্য.
ঈদ মুবারক রুমান ভাই…..আপনার লেখাটাও খুব ভালো লাগলো…..আপনার পরিবারের সকলকে জানাই ঈদ এর শুভকামনা……ভাল থাকবেন…
ঈদের শুভেচ্ছা আপনাকেও। ভালো থাকুন সব সময়। শুভ কামনা অনেক অনেক।।
পুরোনো দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিলেন। ভাল লাগলো জেনে আপনার ছেলেবেলার ঈদের দিনগুলোর কথা জেনে, আপনার পরিবারের কথা জেনে।
ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা রইল অনেক প্রিয় রুমান ভাই। ভাল থাকুন সবাইকে নিয়ে, সব সময়।
সেই দিনগুলোকে অনেক পিছনে ফেলে এসেছি। মাঝে মাঝে সেই সময়গুলোতে ফিরে যেতে মন চাই!
আপনাকেও ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানাই প্রিয় দাইফ ভাই। সবাইকে নিয়ে আপনার ঈদ সুন্দর কাটুক। শুভ কামনা নিরন্তর।
ঈদের আগাম শুভেচ্ছা
আপনাকেও ঈদের আগাম শুভেচ্ছা। ভালো থাকুন সব সময়।।
আপনার লেখা পড়ে নস্টালজিক হয়ে গেলাম, ভালো লাগলো। চালিয়ে যান। ঈদ মোবারক । Émøťíöñäł Ápù
লেখাটা লিখতে গিয়ে আমিও নস্টালজিক হয়ে গিয়েছিলাম। আপনাকে ঈদের শুভেচ্ছা অপু ভাই। ভালো থাকুন সব সময়।।
এবার ঈদের দিনটিও কাটুক হাসি আনন্দে !!
শুভকামনা সবসময়ের জন্য।
এবারের ঈদের প্রতিটি ক্ষণ আপনার জন্য আনন্দ বয়ে আনুক। শুভ কামনা নিরন্তর। ভালো থাকুন সব সময়।।
ঈদের শুভেচ্ছা ভাইয়া।
আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা আপু। অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো।।
ঈদ মোবারক। সেই সময়ের দিনগুলো আজও সুন্দর। সেই আগের মত আপনার ঈদ আজও সুন্দর হোক। সেই কামনা করি। আবারো ঈদ মোবারক।
ঈদ মোবারক বাঁধন ভাই। কামনা করি সকলের ঈদ যেন সুন্দর হয়। আপনার ঈদও সুন্দর কাটুক।
অনেক শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য। ভালো থাকুন সব সময়।
ঈদ মবারক
ভালো থাকবেন।
ঈদের শুভেচ্ছা আপনাকে। ভালো থাকুন সব সময়।।
লেখাটা পড়ে নস্টালজিক হয়ে গিয়েছিলাম।
লেখাটা লেখার সময় আমিও নস্টালজিক হয়ে গিয়েছিলাম।
শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।
ছোট বেলার ঈদের আনন্দ অনেক। এখন বড় হয়ে দেখছি ঈদের কোন আনন্দ নেই! হা হা হা…। নিজকে মনে হয় টাকার মেশিন। দিলে সবাই ভাল বলে!
এটাই বাস্তবতারে ভাই ! টাকাতো ছাপাই কিন্তু নিজে তো পাই না !
বাস্তবতা মেনে নিতেই হয় রাসেল ভাই!
কিন্তু মুঞ্চায় না :(
কিছুই করার নাই। :(
@সাহাদাত উদরাজী ভাইঃ হুম, ছোট বেলার ঈদে অনেক আনন্দ ছিল। ছিল অনেক উচ্ছলতা।
কেমন কেটেছিল আপনার এবারের ঈদ?
ছোটবেলার সেই আনন্দমূখর দিনগুলো আর কখনও ফিরে পাওয়া যায় না। সেই হাসি, সেই কান্না – বড় হয়ে গেলে হয়ে যায় হীরা পান্না!
স্মৃতিকথা বেশ হয়েছে, ভালো লাগলো পড়ে।
এবারের ঈদ কেমন কেটেছে?
হা হা হা…
বেশ বলেছেন হুদা ভাইয়া। স্মৃতি কথা আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। এবারের ঈদ ভালো কেটেছে। ঈদের ১ম দিন বৃষ্টির কারণে বিঘ্নিত হয়েছিল যদিও। তারপরেও সবাইকে নিয়ে সুন্দর ঈদ কেটেছে এবার।
ভালো থাকুন সব সময়।।
ঈদের পুরাতন দিনগুলো মিস করি।
সত্যিই, সেই দিনগুলোকে খুব মিস করি!