হয়তো এরকমই কিংবা না

মানুষের জীবন প্রদীপ একদিন না একদিন নিভে যায়। কারোটা আগে, কারোটা পরে। আবার কারোটা অনেক আগেই নিভে যায়। আমার জীবন প্রদীপ অনেক আগেই নিভে যাক সেটা আমি চাই না। কারণ এই জীবন যুদ্ধে আমি পরাজিত সৈনিক হতে চাই না। আমি জয়ী হতে চাই এই জীবন সংগ্রামে।

আমার সহপাঠী, বন্ধুমহল, সমাজ আমার প্রতি সিম্প্যাথি দেখাক সেটা আমি মোটেও কামনা করি না। আমি চাই মানুষের ভালোবাসা। মানুষের ভালোবাসাই আমার সম্বল। এটা নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে চাই, চাই আরো কয়েকটা দিন বাঁচার। আজ আমি খুবই ক্লান্ত। এতই ক্লান্ত যে কালকের দিনটিতে আমার শরীর বেঁচে থাকার শক্তি পাবে কিনা তা নিয়ে বরাবরের মতো সন্দিহান। জীবনের সাথে লড়াই করতে করতে সত্যিই আমি ক্ষত-বিক্ষত।

খোদার অশেষ কৃপায় আমাদের যথেষ্ট পারিবারিক সহায়-সম্পত্তি রয়েছে। যার ফলে আমার পরিবার এমন চেষ্টার বাকী রাখেনি যাতে আমি সুস্থতা লাভ করতে পারি কিংবা আমাকে বাঁচানো যায়। তারা মিছে সান্ত্বনার জন্য কাড়ি কাড়ি অর্থ ব্যয় করে গেছে আমার জন্য। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলাফল- প্রতিদিনের মতো আমার অবস্থা আজকেও অবনতির দিকে। ডাক্তার এসে নিয়মিত চেক-আপ করে যায়, হাসোজ্জ্বল মুখে বলে যায়- আমি সুস্থ হয়ে উঠবো, স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবো। কিন্তু এটা যে শুধুই সান্ত্বনা সেটা বুঝতে আমার কষ্ট হয় না।

বাইরের মহলে আমার অসুখের কথা শুধুমাত্র আমার গুটি কয়েক জন বন্ধুই জানে। আমি তাদের ওয়াদা দিয়ে রেখেছি যাতে তারা আমার এই কঠিন অসুখের কথা কাউকে না জানায়। কারণ আমি কারো সিম্প্যাথি চাই না। কেউ আমার অসুখের কথা শুনে কষ্ট পাক সেটাও আমি চাই না। বরঞ্চ আমার মৃত্যুর পর আমার জন্য তারা শোকাহত হোক সেটাই ভালো।

আমার বাঁচার সম্ভাবনা যে একেবারেই শূন্যের কোটায় সেটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার পরিবারকে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে। তাই নিকটাত্মীয়দের শেষবারের মতো দেখার জন্য চিকিৎসার ফাঁকে দেশের বাইরে থেকে ৩ দিনের জন্য বাড়িতে এসেছি। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যাচমেট আজিজের সাথে আমার প্রতিনিয়ত যোগাযোগ হয়। বিদেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালেও ওর সাথে কথা হয় প্রায় সময়। দেশে আসার কথা বন্ধুমহলের একমাত্র তাকে জানিয়েছিলাম। সে খুব আকুতি জানিয়েছিলো আমাকে একটু দেখার জন্য। কিন্তু আমি তাকে নিষেধ করেছি। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আমার মতো তারও খুব কষ্ট হয়েছে অন্তত পক্ষে শেষবারের মতো একে অপরের সাথে দেখা হচ্ছে না বলে।

তাই খুব স্বাভাবিকভাবে বলতে অসুবিধা হয় না- বিদায় বন্ধু, বিদায় পৃথিবী।

————————————————————————–

 ***জীবনের শেষ কথাগুলো হয়তো এরকমই ছিলো সদ্য প্রয়াত অ্যাডভোকেট সৈয়দ আশিকুল হুদা ভাইয়ের। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৬ষ্ঠ ব্যাচের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। অনার্সে উনার রেজাল্ট ছিলো ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড। গত ২১শে জুলাই ইন্ডিয়ার একটি হাসপাতালে মরণব্যাধি ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৃথিবীকে চির বিদায় জানান তিনি। ২৩ তারিখে উনার লাশ দেশে আসার পর উনার গ্রামের বাড়ি হাটহাজারীতে দাফন করা হয় আশিকুল হুদা ভাইকে।

সৈয়দ আশিকুল হুদা ভাই

সৈয়দ আশিকুল হুদা ভাই

ভালো থেকো ভাইয়া। বেহেশতে শান্তিতে থেকো।

About চাটিকিয়াং রুমান

সবসময় সাধারণ থাকতে ভালোবাসি। পছন্দ করি লেখালেখি করতে, আনন্দ পাই ডাক টিকেট সংগ্রহ করতে আর ফটোগ্রাফিতে, গান গাইতেও ভালবাসি। স্বপ্ন আছে বিশ্ব ভ্রমণ করার...।।

Posted on জুলাই 26, 2014, in বিবিধ, সাম্প্রতিক. Bookmark the permalink. 6 টি মন্তব্য.

  1. ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন…… আল্লাহ ওনাকে জান্নাত বাসী করুন।

  2. বন্ধু মারা গেলে – ব্যাথা থেকে যায় – আমার এই অভিজ্ঞতা।

সূর্য গুপ্ত এর জন্য একটি উত্তর রাখুন জবাব বাতিল